শোবিজ বাংলা ডেস্ক : নওগাঁর মেয়ে আনিকা বুশরা মারিয়া, ছোটবেলা থেকেই সমাজসেবী বাবা মোঃ আব্দুল লতীফকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সাথে করতেন ছোট ছোট সমাজসেবা। ২০১৮ সালে সে তৎকালীন মিস ইউনিভার্স কাটরিওনা গ্রে কে দেখে অনুপ্রাণিত হন প্যাজেণ্ট (বাংলাদেশে যা সুন্দরী প্রতিযোগিতা নামে পরিচিত) অংশগ্রহণে। ইন্টারনেট এ সার্চ করে দেখেন কাটরিওনা শুধু মিস ইউনিভার্সই নন, সে একজন সমাজ সেবীও। তখনি আনিকা বুঝতে পারেন প্যাজেণ্ট কুইন হওয়া মানে শুধু গ্ল্যামার নয়- আসল সুন্দরী সেই যার মনের সৌন্দর্য্য আছে , যে একজন খাঁটি মনের মানুষ। যেই ভাবা সেই কাজ নিজে নিজেই ইন্টারনেট এর তথ্য নিয়ে শুরু করেন প্রস্তুতি – ছয় ইঞ্চি হিল নিয়ে ক্যাটওয়াক অনুশীলন , বক্তৃতা দেয়া থেকে শুরু করে নিজেই শিশুদের নিয়ে “নো মোর চাইল্ড এবিউজ ” নামক একটি ক্যাম্পেইন তৈরি করে ঘরে ঘরে শিশুদের অভিভাবকদের দেন প্রশিক্ষণ।
আনিকা বলেন “খুবই দুঃখ লাগে যখন দেখি আমার আশেপাশের সবাই ভাবেন প্যাজেণ্ট মানেই শুধু মিডিয়াতে কাজ করা। প্যাজেণ্ট এর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে প্যাজেণ্ট কুইনরা যে কত কত সমাজসেবামূলক কাজ করেন সেই খবর আমরা কেউ রাখিনা। আমাদের মধ্যে কতজন জানি যে মিস ওয়ার্ল্ড ১৯৯৪ ঐশ্বরিয়া রাই এর সমাজসেবামূলক সংস্থা আছে যেখানে থেকে উনি অগণিত শিশুদের সাহায্য করেন?

অবশেষে ২১ বছর বয়সী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী, এবং স্টুডেন্ট লিডার আনিকা অংশগ্রহণ করেন “দ্যা রিয়েল ডিভাস ” নামক একটি প্যাজেণ্ট এ, যেখানে প্রায় শতাধিক অংশগ্রণকারীদের পিছনে ফেলে তিনি জয় করেন মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২৩ এর খেতাব। এখন তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্বের বৃহত্তম ৪টি প্যাজেণ্ট এর মধ্যে একটি মিস আর্থ এর চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করার জন্য ভিয়েতনামে। আনিকা জানান-” প্যাজেণ্ট এর ন্যাশনাল খেতাব শুধু একটা শুরু , এর পরে একটা কড়া প্রস্তুতি নিতে হয় , যাতে আমাকে আপ্রাণ সাহায্য করছেন আমার ন্যাশনাল ডিরেক্টর মালা খন্দকার, সহ আমার সকল মেন্টর এবং শুভাকাঙ্ক্ষী। আশা করছি সামনে বাংলাদেশের ভালো ফলাফল নিয়ে আসবো।” আনিকা আরো জানান “অন্যান্য দেশে প্যাজেণ্ট ব্যবহার হয় নারী উন্নয়ন মূলক কাজে , আর আমরা বাংলাদেশে এখনো সেই “উইশ ” আর “এইচটুও” নিয়েই পরে আছি !! থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স যখন এতো এতো ব্যাগ স্পনসর করা জামা কাপড় নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল প্যাজেণ্ট এ যান, আমরা সামান্য কাপড় স্পনসর পেতেই হিমশিম খাই !! আমাদের দেশীয় ডিজাইনের দের আমি মনে করি নিজেরাই এগিয়ে আশা উচিত – মুসলিম, তাঁত, খাঁটি সিল্ক , জামদানির মতো দেশীয় কাপড় দিয়ে কত সুন্দর ভাবেই না তারা একটা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজার পেতে পারেন !! অথচ এই বিষয়টি বোঝার মতো বা নিজের দেশেকে আরো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার মতো দেশাত্মবোধ আছে হাতে গোনা ডিজাইনারদের !! “
আনিকা প্যাজেণ্ট এর প্রস্তুতির সাথে সাথে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেন একটি নন -প্রফিট অর্গানাইজেশন “ইকো ওরিওরস বাংলাদেশ” যার মধ্যে সে সামনে তার প্রজেক্ট “গ্রীন ৬৪” নিয়ে আসবেন বাংলাদেশের ৬৪টা জেলায়। আনিকা জানান “আমরা অনেকেই বুঝতে চাইনা যে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট্ট ছোট্ট উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে আমরা কিন্তু পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। আমাদের শিশু-কিশোরদের বৃক্ষরোপন, রিডিউস – রিইউস -রিসাইকেল শিখানো, প্লাষ্টিক এর কম ব্যবহার সহ অনেক অনেক ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারি। আমরা কি জানি শুধু ১ টন রিসাইকেল অ্যালুমিনিয়াম ক্যান এর মাধ্যমে আমরা যে এনার্জি সেভ করবো তা ১০০০ গ্যাসোলিনের এনার্জির সমান ? “
আনিকা তার এই উদ্দ্যোগে ইতোমধ্যেই সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের বন ও জলবায়ু মন্ত্রী জনাব মো : শাহাব উদ্দিনের সাথে যাতে বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে বৃক্ষরোপন এবং রিডিউস – রিইউস -রিসাইকেল নিয়ে ছয় ঘন্টার একটি কারিকুলাম সংযুক্ত করা হয়। এমনি সামনে বায়ু দূষণ , শব্দদূষণ, পানিদূষণ রোধে ১০ টি উদ্যোগ নিয়ে আনিকা আসছেন বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলাতে তার “গ্রীন৬৪” প্রজেক্ট নিয়ে। এই উদ্যোগে আনিকার সাথে থাকছে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিদরা ! আনিকার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আনিকা সবার দোয়াপ্রার্থী। আনিকার সংস্থার সাথে ভলান্টিযার হয়ে যুক্ত হতে বা আর্থিক সাহায্য করতে ইমেইল করুন ecowarriorsbangladesh@gmail.com